আমাকে তুমি


কবি: জীবনানন্দ দাশ


আমাকে

তুমি দেখিয়েছিলে একদিন:

মস্ত বড়ো ময়দান— দেবদারু পামের নিবিড় মাথা— মাইলের পর মাইল;

দুপুরবেলার জনবিরল গভীর বাতাস

দূর শূন্যে চিলের পাটকিলে ডানার ভিতর অস্পষ্ট হ’য়ে হারিয়ে যায়;

জোয়ারের মতো ফিরে আসে আবার;

জানালায়-জানালায় অনেকক্ষণ ধ’রে কথা বলে:

পৃথিবীকে মায়াবীর নদীর পারের দেশ ব’লে মনে হয়।

তারপর

দূরে

অনেক দূরে

খররৌদ্রে পা ছড়িয়ে বর্ষীয়সী রূপসীর মতো ধান ভানে— গান গায়— গান গায়

এই দুপুরের বাতাস। 


এক-একটা দুপুরে এক-একটা পরিপূর্ণ জীবন অতিবাহিত হ’য়ে যায় যেন। 


বিকেলে নরম মুহূর্ত;

নদীর জলের ভিতর শম্বর, নীলগাই, হরিণের ছায়ার আসা-যাওয়া;

একটা ধবল চিতল-হরিণীর ছায়া

আতার ধূসর ক্ষীরে-গড়া মূর্তির মতো

নদীর জলে

সমস্ত বিকেলবেলা ধ’রে

স্থির। 


মাঝে-মাঝে অনেক দূর থেকে শ্মশানের চন্দনকাঠের চিতার গন্ধ,

আগুনের— ঘিয়ের ঘ্রাণ;

বিকেলে

অসম্ভব বিষণ্ণতা। 


ঝাউ হরিতকী শাল, নিভন্ত সূর্যে

পিয়াশাল পিয়াল আমলকী দেবদারু—

বাতাসের বুকে স্পৃহা, উৎসাহ, জীবনের ফেনা; 


শাদা শাদাছিট কালো পায়রার ওড়াউড়ি জ্যোৎস্নায়— ছায়ায়,

রাত্রি;

নক্ষত্র ও নক্ষত্রের

অতীত নিস্তব্ধতা। 


মরণের পরপারে বড়ো অন্ধকার

এই সব আলো প্রেম ও নির্জনতার মতো।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

#buttons=(Accept !) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Learn More
Accept !