জঙ্গলের বিভীষিকা (দ্বিতীয় পর্ব)


দ্বিতীয় পর্ব

চোখ খুলতেই নবীন আশ্চর্য হয়ে গেল।অচেনা কতগুল মুখ তাকে ভিড় করে দাঁড়িয়ে।সে একটা খাটিয়াতে শুয়ে।গোটা শরীরটা ব্যথায় ভারী হয়ে আছে।নিজের দিকে তাকিয়ে দেখে গা খালি।শুধু একটা লুঙ্গি পরে আছে।একজন একটা গ্লাস হাতে সামনে এল।

"লিন বাবু , একটু গোরম দুধ খেয়ে লিন।" এই বলে লোকটা তাকে খাইয়ে দিলো।

"হামি শেখর অছি।হামরা মছলি পাকাড়তে গিছিলাম নদীতে, খানিক দূর গিয়ে দেখি একটা নৌকা ভেসে আসছে, মাঝি নেই।নৌকাটা চিনতে পারি।এ নৌকা নিয়ে একদিন আগে হামাদের দু'জন বেড়িয়াছিল, এখনও ফেরিনি।তাই পাকাড়তে যায়।গিয়া দিখি আপনি শুয়ে আছেন।জ্ঞান ছিল না আপনার, নাড়ি চলছিল।তারপর এখানে নিয়ে আসি।তোখন দুপুর ছিল।আর আপনার জ্ঞান এলো এই এখন।"

নবীনের চোখে জল এসে গেল।সে বেঁচে আছে।

শেখর - "তা বাবু, কী হোয়েছিল আপনার? ওভাবে নৌকায় পড়েছিলেন, আর ও নৌকা পেলেন কোথায়?"

নবীনের গলা শুকিয়ে এল।বুক ফুলছে তার।ধীরে ধীরে সব মনে পড়ে গেল।মেঘের গর্জন-হিংস্র জানোয়ার-সুজিতের ঘাড় থেকে বেড়িয়ে আসা রক্ত-কোনোরকমে পালিয়ে নৌকায় ওঠা।নবীন আর শুয়ে থাকতে পারল না, উঠে বসল।নিজেকে সামলে নিয়ে গতরাতের সব ঘটনা বলতে শুরু করল।শুনে প্রত্যেকে অবাক, আগে এমন ঘটনা এদের কেউই শোনেনি।

শেখর - "কী বলছেন বাবু ? জানওয়ার ও ভী মানষের মোতো?"

একজন বলল, "বড় নেকড়ে দেখেছি, তবে সেটা উত্তরে পাহাড়ের ওখানে।"    

শেখরদের দু'জন এখনো বাড়ি ফেরেনি, তাই তারা পরিকল্পনা করে সেই জঙ্গলে যাবার, যেখানে নৌকা বাঁধাছিল।দ্বিতীয় বার আবার সেই বিভীষিকাময় জঙ্গলে যেতে নবীনের মন কিছুতেই রাজি হতে চাইছিলো না। কিন্তু শেখর বোঝায়, "হামরা তো দিনের সময় খোঁজা খুঁজি করব আর সন্ধের আগেই ফিরে আসব।তোখন তো কুনো  অসবিধা নেই, হাঁ। হামরা তো সোবাই  এক সাথেই থাকবো।" 

গত রাতের এমন মর্মান্তিক-পৈশাচিক ঘটনা কেমন করে ভুলবে সে।চোখ বুজলেই নবীনের খালি মনে হয়, এই বুঝি শয়তানটা ঝাঁপিয়ে পড়ে।আর রক্ষে নেই।ভয়ে সারা শরীর কাঠ‌ হয়ে যায়।

পর দিন সকালে দুটো নৌকা নিয়ে ওরা জনা পাঁচ বেড়িয়ে পড়ল।শেখর ,বরুণ,হারাধন,নিমাই আর নবীন।

নবীন খেয়াল‌ রাখছিল ঠিক কোনখানটায় আগের দিনে নৌকা বাঁধা ছিল।স্রোতের প্রতিকূলে দাঁড় টানতে হচ্ছে। যদিও টান খুব বেশী না, তাও শেখর একটু ধমক দিয়ে বলল, "থোরা জাদা জোরে দাঁড় চালা, সোকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে এলো যে।" 

কিছু সময় পর, বাঁদিকে বেশ খালি একটা জায়গা দেখে নবীন সেটা চিনতে পারে। সেই নৌকার দড়িটা তখনও সামনের গাছের গুঁড়িটার সাথে বাঁধা রয়েছে। নবীনের চিনে নিতে ভুল হয়নি। নৌকা থামল।ওরা নেমে এল।হারাধন নবীনকে বলল, "এই জঙ্গলের কথা বলেছিলেন?" নবীন মাথা নাড়ায়। 

হারাধন-" আরে আপনার মাথা কী ঠিক আছে মশাই, এই জঙ্গলে এক বড় জাতের শিয়াল ছাড়া আর তেমন ভয়ংকর কিছুই থাকে না।আমরা মাঝে মধ্যেই এখানে আসি।মাছ ধরা হয়ে গেলে বন মোরগ, বড় কাঠবিড়ালি ধরে নিয়ে যায় খাবার জন্য।"

নবীন -"আমি সত্যি বলছি।এই জঙ্গলেই সেই শয়তানটা আছে, আমি ভয়ে দৌড়ে পালিয়ে ছিলাম।কোন দিকে যাচ্ছিলাম খেয়াল নেই।তারপর সামনে নৌকা দেখতে পেয়ে উঠে বসি আর নৌকার দড়িটা খুলে দিই।"

হারাধন -"তারা হইত এখানেই আটকা পড়েছে।নৌকা ছাড়া ফিরবে কি করে।" 

সকাল থেকে দুপুর হয়েছে।সকলের খিদেও পেয়েছে। নবীন আর কিছু বলল না।মনে মনে ভাবলো যদি এরা সেই ভয়ংকর রাতের সাক্ষী হত তবে, এ-জঙ্গলে দ্বিতীয় বার পা রাখার সাহস করত না। 

আসার সময় রুটি আর তরকারি সাথে এনেছিল।নদীর জলে হাত মুখ ধুয়ে সবাই খেতে বসে এমন সময়, হঠাৎ! একটা ঠক্ ঠক্ শব্দ কানে আসতেই সবাই চুপ।বরুণ আর নিমাই এগিয়ে গেল শব্দের কারণ দেখতে।একটা গাছের  আড়াল থেকে উঁকি মেরেই স্থির হয়ে গেল।বরুণ বাকিদের দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে ঠোঁটে আঙুল দেখিয়ে চুপ করতে বলেই  ধীরে ধীরে তাদের দিকে এগিয়ে আসতে থাকল।অন্যজন তখনও সেখানে স্থির আছে।শব্দটা একটু থেমে আবার শুরু হল।বরুণ ততক্ষনে বাকীদের সামনে গিয়ে আস্তে অস্তে বলল, "কোনো শব্দ করো না, আমি তির-ধনুক নিয়ে যাচ্ছি ।" 

নৌকা থেকে তির আর ধনুক তুলে নিয়ে সে একই ধীর পায়ে এসে দাঁড়াল গাছটার আড়ালে।খুব সাবধানে টান দিল।শব্দটা আরো একবার থেমে গেল।বাকিরা এবার সত্যি ভয় পেয়ে গেছে।কেও কোন শব্দ করছে না। 

গাছের ওধারে কে আছে?

ধনুকের টান আলগা হতেই বাকিদের মনে জমা ক্ষনিকের ভয়ের মেঘ এক ঝটকায় উড়ে গেল।একটা বন মোরগ বিরাট আওয়াজ করতে করতে তির  গাঁথা অবস্থায় বনের মধ্যে মিলিয়ে যাবার আগেই বরুণ আর নিমাই তার পিছু নিল।হারাধন নবীনকে বলল, "এ জিনিস  শিকার করা সহজ কাজ নয়, ওস্তাদ না হলে পারা যায় না।আর এ শিকারের মজাই আলাদা।" 

নবীন মনে মনে বলে, একটা নিরীহ মোরগকে শিকার করে যদি এরা এতো আনন্দ পায় তবে বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষকে শিকার করে শয়তানটা কতই না আনন্দ পায়।

হারাধন বলল, "এরা দু'জন মোরগ ধরুক ততক্ষণ আমরা সামনের দিকে যাই।" 

ওরা এগিয়ে গেল, হারিয়ে যাওয়া দু'জনকে খুঁজতে।শান্ত বাতাস আর ডালপালার ফাঁক দিয়ে আসা রোদ ওদের দেহকে ঝিমিয়ে দিচ্ছে। 

দূরে কি একটা চক চকে বস্তু সকলের নজর কাড়ল।কাছে গিয়ে নবীন দেখল, তার হাত ঘড়িটা।গত পরশু রাতে নবীন ঠিক এখানটায় পড়ে গিয়ে জ্ঞান হারিয়েছিল।ঘড়িটা আর চালু নেয়, ফিতেটাও ছিঁড়ে গিয়েছে।সামনে আরও বেশ কিছুটা গেল, নাম ধরে অনেক ডাকা ডাকি করল কিন্তু কোনো সাড়া পেল না।উল্লেখযোগ্য তেমন কিছুই চোখে পড়ল না যাতে বোঝা যায় সেই দুজন এদিকেই এসেছিল বা নিয়ে আসা হয়েছিলো।ফিরতে যাবে, এমন সময় পাশ থেকে আসা এক ঝলক ঝাঁঝালো অথচ মিষ্টি হাওয়া ওদের ঝিমিয়ে থাকা শরীরকে সজাগ করে দিল।ওদিকে গিয়ে দেখল একটা মস্ত প্রাচীন পিপুল গাছ শিকড়ে মাটি নিয়ে উগরে পড়ে আছে।আর সে জায়গায় একটা বড় গর্ত, গন্ধটা সেখান থেকেই আসছে।কাছে গিয়ে দেখার চেষ্টা করল।ভিতরের জমাট অন্ধকার সবকিছু আড়াল করে রেখেছে। 

শেখর নৌকা থেকে লম্বা রশা দড়ি আর কেরোসিনের হ্যারিকেন লাইটটা নিয়ে এল।ওরা দড়ির একপ্রান্ত পাশের একটা গাছের সাথে বেঁধে নিয়ে অন্যপ্রান্তটা গর্তে ফেলে দিল।একে একে নেমে এল নীচে।অন্ধকার আরো বেশী করে ঘিরে ধরল।হারাধন বলল, "আরে হ্যারিকেনটা জ্বালাও কিছুই তো দেখা যাচ্ছে না।"

শেখর দেশলাই বের করে হ্যারিকেন জ্বালায়।হ্যারিকেনের হলুদ মৃদু আলোয় তারা যা দেখল তাতে তারা বিস্মিত হয়ে গেল।এ কোথায় এসে পড়েছে? 

দু'পাশে খাড়া উঁচু পাথরের দেওয়াল।নীচে এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে পাথর, হাড়, মাংস-আধ খাওয়া ও আধ পচা।মাথার উপরে ছাদ থেকে বেড়িয়ে আছে নেকড়ের সারিবাঁধা সাদা সাদা সূচালো দাঁতের মতো গাছের শিকড়। 

বহু প্রাচীন মাটির তলদেশে অজানা গুপ্ত পথে দাঁড়িয়ে শেখর বলল, "এ জঙ্গলে এমন গুপ্ত পোথ আছে, আগে তা বাপ দাদার মুখেও শুনেনি।"

জায়গাটা যেমন ঠান্ডা তেমনি স্যাঁতসেঁতে।পচা মাংসের দুর্গন্ধ ছাপিয়ে আগের ঝাঁঝালো-মিষ্টি গন্ধটা নাকে এল।তিনজন সামনে পড়ে থাকা হাড়, পাথর থেকে পা'কে রক্ষা করতে করতে এগোতে থাকল।সুরঙ্গটা সামনে কিছু হাত দূরেই ডান দিকে বাঁক নিয়েছে।

নবীন বলল, "আর এগিয়ে যাওয়াটা ঠিক হবে না।কে জানে সামনে আমাদের জন্য কী অপেক্ষা করে আছে?"

হারাধন বলল, "গন্ধটা আগের থেকে বেশীই পাওয়া যাচ্ছে, মনে হয় কাছেই এসে গেছি।"

ওরা আবার হাঁটা শুরু করল।শেখরের হাতে থাকা হ্যারিকেন আলোটা দুলতে দুলতে সবার আগে চলেছে।হঠাৎ নবীন বলে উঠল, "দূরে ওটা কী জ্বল জ্বল করছে?"

আচমকা নবীনের গলা শুনে দুজনে চমকে দেখল অন্ধকারের মাঝে অল্প সবুজ আলোর ছটা।তারা কিছুক্ষণ ওখানে দাঁড়িয়ে রইল।সেটা একই রকম জ্বলে রয়েছে।গন্ধটা আরো গাঢ় হয়ে নাকে আসতে থাকল । হারাধন -"জোনাকি হতে পারে ভিতরে এসে পথ হারিয়েছে", বলে শেখরের হাত থেকে হ্যারিকেনটা নিয়ে ধীরে এগিয়ে গেল।পেছনে শেখর আর নবীন।একটা মৃদু শব্দ কানে আসতে থাকল।যতই এগিয়ে যেতে থাকে শব্দ আর গন্ধ ততই বাড়তে থাকে।

আর কিছুটা এগিয়ে যেতেই সবটা পরিষ্কার হয়ে গেল।একদিকের দেওয়ালের ফাটল হতে জলের স্রোত তার ছন্দে বয়ে ‌চলেছে।জলের ওপর থেকে বাষ্প ধোঁয়ার মতো এঁকে বেঁকে উঠে মিলিয়ে যাচ্ছে। 

জলের এধারে দেওয়ালের কাছে পড়ে থাকা পচা চামড়া মাংসের ওপর গজিয়ে উঠেছে, প্রায় হাত একে'র মতো একটা মাশরুম।যার সরু ডাঁটার ওপর থাকা সবুজ টুপির ন্যায় অংশ থেকে বেড়িয়ে আসছে সবুজ জ্যোতি।আর এই জ্যোতির সাথেই মিশিয়ে দিচ্ছে তার মন মাতানো ঝাঁঝালো-মিষ্ট গন্ধটা।শেখর -"আরে এমনটা‌ তো আগে দিখিনি, কতো জায়গায় গিছি জঙ্গলে ঘুরেছি এমন মশরুম এ প্রথম দিখছি।" হারাধন শেখরের কথায় সায় দিয়ে বলল, "জোনাকির মত মাশরুম ও যে আলো দেয়, এমন দেখিনি ।" 

হারাধন নবীনের হাতে হ্যারিকেন লাইটটা দিয়ে আরো সামনে এগিয়ে গেল।আঙুল দিয়ে স্পর্শ করল সবুজ টুপির মতন অংশে আর সঙ্গে সঙ্গে  বেড়িয়ে আসা সবুজ আলোর জ্যোতি দ্বিগুণ হল ।তার সাথে বেড়িয়ে আসা গন্ধটা আরো বেশী মিষ্টি প্রাণ জুড়ানো হল।

নবীন একবার বইতে পড়েছিল, যে কিছু কিছু মাশরুম কীট পতঙ্গকে আকৃষ্ট করার জন্য এমন আলো দেয়, জোনাকির মতন।

নবীন বলল, "চলো এবার ফিরে যাই।আর দেরি করা ঠিক হবে না।হ্যারিকেনের কাচে কালি পড়েছে।" শেখর -" হাঁ চলো, এখানের মিঠা গোন্ধে মাথাটাও কেমন ঝিম ঝিম করছে।" 

তিনজন ফিরতে থাকে।হ্যারিকেনের কাচে পরা মোটা কালির চাদর আলোকে বেশী দূর যেতে দিচ্ছে না।ওরা একটু জেরেই পা চালিয়া যাচ্ছে হঠাৎ একটা শব্দে ওরা থমকে দাঁড়ায়।ঠিক বড় পাথর জলে পড়লে যেমনটা হয়।

ওরা ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকাল।এখান থেকে কিছু বোঝাই  যাচ্ছে না।দূরে জ্বলে থাকা সবুজ আলোটা যেন হটাৎ করেই নিভে গেল।ওরা আবার সামনের দিকে হাঁটা দিল।কিছুটা চলার পর নবীন আচমকাই দাঁড়িয়ে পড়ল।হারাধন জিজ্ঞাসা করল, "আবার কী হল? দাঁড়িয়ে পড়লে যে? " 

নবীন ধীর গলায় বলল,"গন্ধ!"।

মাশরুমের সুন্দর মিষ্টি গন্ধের সাথে এবার যোগ দিয়েছে একটা বুনো গন্ধ।জলে যে কোনো পাথর পড়েনি সেটা নবীন বুঝতে পেরেছে।স্বয়ং মৃত্যু চুপি সাড়ে তাদের পিছু নিয়েছে।নবীন কাঁপছে, তার হাতে থাকা হ্যারিকেন আলোটা প্রচণ্ড রকম দোল খেয়ে চলেছে।পাথরের দেওয়ালে তাদের ছায়া নাচ করছে।এ নাচ আনন্দের নাকি কষ্টের!

পেছনে ঘুরে দেখার সাহস নেয় তার।শেখর আর হারাধন নবীনের অবস্থা দেখে কি করবে বুঝে উঠতে পারল না।

দু'জনে বলে উঠল,

"কিসের গন্ধ, কী হয়েছে তোমার?"

"কিসের গোন্ধ , কী হয়ছে তুমার?"

নবীন কিছু বলতে যাবে তার আগেই কানে তালা লাগিয়ে দেওয়ার মত একটা বিকট শব্দ সুরঙ্গের পাঁজর কাঁপিয়ে দিল।বুনো গন্ধে ভিতরের বাতাস আরো বেশী ভারী হয়ে উঠল।নবীন বহু কষ্টে বলে উঠল, "পালাও! এই সেই শয়তান পালাও!"

তিনজন প্রাণপনে সামনের দিকে ছুটতে থাকল।নিচে পরে থাকা পাথর, হাড়-মাংস কোথায় যে পা ফেলছে কোনো খেয়াল নেয়।হ্যারিকেনের আলোয় ভাল করে কিছুই দেখা যাচ্ছে না, তাও নবীনের ডান হাতের আঙুলগুলো হাতলটাই যেন মরণ কামড় বসিয়েছে।এবার তিনজনের পায়ের শব্দের সাথে আর এক জনের পায়ের শব্দ যুক্ত হল।ঠিক তাদের পেছনে।ভিতর এই চতুর্থ জনের পায়ের শব্দে গম্ গম্ করে কাঁপতে থাকল।হারাধন ছুটতে ছুটতে বলল, "দড়িটা! দড়িটার কাছে যেতেই হবে।" নবীন কিছুটা পিছিয়ে পড়েছে ।তার পা যেন  আর পারছে না।

"না থামলে চলবে না, থামলে চলবে না।" 

শয়তানটা আবার একবার গর্জে উঠল।হঠাৎ বড় একটা পাথরে আঘাত খেয়ে নবীন চিৎকার করে সামনে ছিটকে পরল।

নবীনের চিৎকার শুনে শেখর আর হারাধন পিছনে তাকিয়ে দেখল নবীন উপুড় হয়ে পরে আছে।হ্যারিকেনটা তার ডান হাতের কাছে পরে।কাচটা ভেঙে পরেছে পাশেই। 

কেরোসিন মাখা পরে থাকা হ্যারিকেন এখন মশালের মতো শিখা নিয়ে দপ্ দপ্ করে জ্বালছে।ওরা নবীন কে আনতে যাবে, এমন সময় মুহূর্তের মধ্যে নবীনের কাছে এসে দাঁড়াল, এক প্রকান্ড-বিকট চেহারার দু'পেয় প্রাণী।যার সারা শরীর কালো বড় বড় লোমে ঢাকা।মুখে গড়্ গড়্ শব্দ করতে করতে ঝুকে পরল নবীনের দিকে।সেটার বিষাক্ত  নিশ্বাসে নবীনের দম বন্ধ হয়ে এল।নবীন পরে থাকা অবস্থায় ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকাল।হ্যারিকেনের দপ্ দপে্ আলোয় শয়তানটার মুখ আরো বেশী ভয়ংকর বেশী নারকীয় লাগছে।গড়্ গড়্ শব্দটা ক্রমশ বেড়েই চলছে।

আচমকাই শয়তানটা তার বিশ্রী গড়্ গড়্ শব্দটা বন্ধ করে মুখ হাঁ করে লক লকে জিভটা বার করল।

নবীনের উপর ঝাঁপিয়ে পড়তে যাবে এমন সময়  নবীনের মধ্যে যেন অমানুষিক শক্তি এসে ভর করল।সে এক লাফে উঠে দাঁড়াল আর সঙ্গে সঙ্গে জ্বলন্ত হ্যারিকেনটা ছুড়ে দিল শয়তানের গায়ে।মুহূর্তের মধ্যে সুরঙ্গের ভিতর পোড়া গন্ধে ভরে গেল।তার সাথে কান ফাটানো মৃত্যু যন্ত্রণার হাহাকার পাথুরে দেওয়ালে ধাক্কা খেয়ে বার বার ঘুরতে থাকল।হারাধন আর শেখর যেন নির্জীব শুকনো কাঠ হয়ে গেছে।নবীন ছুটে এসে হারাধন আর শেখরের কাঁধে হাত রেখে এক ঝাঁকনি দিয়ে বলল, "চলো, এখানে থাকলে দম বন্ধ হয়ে মরতে হবে।চলো!" 

দু'জনে যেন প্রাণ ফিরে পেল।সামনে কিছুটা যেতেই তারা দড়িটা দেখতে পেল।সেটা ধরেই উপরে উঠে এল।এখনও শয়তানটার চিৎকার অল্প অল্প কানে আসছে।তারা গর্তের পাশে গাছে হেলান দিয়ে বসে পড়ল।নবীনের মাথার এক পাশ থেকে অল্প অল্প রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। 

এখন সবে গোধূলি।চারপাশটাও কেমন থম থমে।গাছের একটা পাতাও নড়ছে না।কারা যেন তাদের  নাম ধরে বার বার ডেকে চলেছে।তাদের খেয়াল হল নিমাই আর বরুণের।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

#buttons=(Accept !) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Learn More
Accept !