কবি: রুদ্র প্রসাদ
আনাচে-কানাচে ফালি রোদ্দুর
হামাগুড়ি দেয় খুব,
মায়াবী বেজায় তো সমুদ্দুর
দিনকর দেবে ডুব।
কাঁপন-ধরানো আবীর খেলায়
জলের লাজুক রঙ,
মিশে অনুযোগ আলগা হেলায়
স্মরণে সহজ ঢঙ?
শেষের আভায় হলদে আকাশ
যেন পরে নেয় শাড়ি,
সোহাগ গড়ছে চিনে অবকাশ
মেঘের ওপরে বাড়ি।
জবার পাপড়ি আলসেমি ভরে
কোঁচড়ে শুকিয়ে যায়,
আবেশের গুঁড়ো ছড়ানোর পরে
মনোরম শোভা পায়।
বট-হিজলের নিয়মিত ক্ষোভ
নিছক আবেগে চলে,
ঘাসের ডগায় সীমাহীন লোভ
কোথাও লুকায় ছলে!
শুকনো পাতার শিহরিত রব
মর্মর ধ্বনি তোলে,
খয়েরি খাতায় মাতে উৎসব
সবুরে অবুঝ ভোলে।
লুকোচুরি করা ডুমুরের ফুল
সহজে আড়াল রাখে,
মেঘদূত জানে কোথাকার মূল
কতখানি ওম চাখে।
শতকের ফেরে সজীবতা যত
আভাসে মিলিয়ে লীন,
শুশুক খেয়ালে আজগুবি তত
ডিগবাজি খেয়ে হীন?
বালক রাখাল সাথে গো-শাবক
লাগায় ভীষণ তাড়া,
পেটের ভেতরে প্রেরণা পাবক
দিয়ে যেতে থাকে নাড়া।
আলো-আঁধারির বেয়াড়া প্রভাব
নতুনের দরে সাজে,
বিজাতীয় শরে ব্যাকুল অভাব
অনুনয়ে শুধু বাজে।
জোছনা বলয়ে অবারিত ডাকে
হাতছানি দেয় নতি,
অথচ আঁকড়ে চারপাশ ঢাকে
মাপে অভাবিত যতি!
কণায় ধূসর কোণের বিরোধ
রসায়ন মেনে ঘটে,
অমোঘ পন্থা করে গতিরোধ
সাবেকী নিয়ম বটে।
সমীকরণের জোর জাগতিক
বিস্ফোরণের পাতে,
দাবানল দেখে ঘোর বেগতিক
মাঝখানকার তাতে।
তদন্তে বোকা বেহায়া ময়না
মাপে কার বেশি দোষ,
খসে পড়ে তবু তারার গয়না
কিসের এমন রোষ?
মরা জোয়ারের টানে গাঙচিল
বানায় সাধের বাসা,
অভিযোগে ঘেরা বিকট পাঁচিল
তাই বোধহয় খাসা।
গভীরে নিবিড় নিশির পালন
আয়োজন হ’লে সারা,
বিজনে গলানো স্বপ্নে লালন
ভাঙা হ’তে পারে কারা।
আবহে চপল প্রয়োগে বিষণ
শরীরী ভাষায় দীন,
বুনো বাতাসের নেশাও ভীষণ
বিষয়ে বিষাদ ঋণ!
পাথুরে মাটির পণে সহযোগ
অসহযোগের কোলে,
বিপরীতে গেলে ছুটে যোগাযোগ
মরণ দুয়ার খোলে।
এলোমেলো সব বেদনে কাতর
বিলায় সবুজ দান,
বনেদি বনের মেশানো আতর
পরিণামে রাখে মান।
জীবনচক্রে যদি ঝোড়ো ধাঁচে
ভাবনা কাটায় ক্ষণ,
তবে কেন সেই উজানেই বাঁচে
কলমে কালির রণ?
গোধূলি বেলার কালচে পরাগ
অবাধে আশিস পাক,
স্বাভাবিক মোহে তোলা অনুরাগ
আজ বেহিসেবী থাক।।
Please do not enter any spam link in the comment box.